আপনি জানেন কি? বিবাহিত জীবনে যৌনতায় পুরোপুরি ফিট থাকতে হলে আপনাকে দৈনন্দিন খাবারদাবারের প্রতি পূর্ণ মনোযোগী হতে হবে। কারণ মানুষ তাদের যৌনশক্তি লাভ করে থাকে তাদের খাবারদাবার থেকেই। সুখী দাম্পত্যজীবনের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালো বোঝাপড়া থাকার পাশাপাশি দরকার স্বাস্থ্যকর যৌনজীবন।
প্রায়ই দেখা যায়, যৌন সমস্যার কারণে সংসারে অশান্তি হয়, এমনকি বিচ্ছেদ পর্যন্ত হয়! অথচ যৌনস্বাস্থ্যের কোনো সমস্যা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় লজ্জায় সে বিষয়ে কেউ আলোচনা করে না। এতে করে মনে নানাপ্রকার কুসংস্কার লুকিয়ে থাকার কারণে অনেকেই ভুয়া চিকিৎসা নিতে গিয়ে আবার প্রতারণারও শিকার হচ্ছেন।
আমাদের আশপাশে তথাকথিত হারবাল, কবিরাজ, ভেষজ নামধারী ভুয়া যৌন-চিকিৎসকদের কোনো অভাব নেই। দেখা যায়, সাধারণ মানুষজনই তাদের খপ্পরে বেশি পড়ে থাকে আর যৌনশক্তি আগে যতটুকু ছিল তাদের চিকিৎসা নিতে নিতে একসময় সেটাও হারাতে বসে।
তাই ভালোভাবে শুনে রাখুন – প্রকৃত কোনো সমস্যা না থাকলে আপনার যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্য কোনো ধরনের কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই, তার জন্য দৈনন্দিন পুষ্টিকর খাবারদাবারই যথেষ্ট।
আপনি হয়তো জানেনই না – প্রকৃতিতেই লুকিয়ে আছে যৌনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার অনেক সমাধান। প্রতিদিন খাবার তালিকায় কিছু পরিবর্তন নিয়ে এলেই স্বাস্থ্যকর যৌনজীবন লাভ করতে পারবেন খুব সহজেই। আসুন জেনে নিই যৌনস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এমন কিছু খাবারের কথা।
ডিম
ডিম সেদ্ধ হোক কিংবা ভাজি, সব ভাবেই ডিম যৌনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৫ ও বি-৬ আছে যা শরীরের হরমোনের কার্যক্রম ঠিক রাখে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের সকালের নাস্তায় একটি করে ডিম রাখুন। এতে আপনার শরীর শক্তি পাবে এবং যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
মধু
আবু নাঈম হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুল (সা.)-এর নিকট মধু খুব বেশি প্রিয় ছিল। আল্লাহর রাসুলের (সা.) নিকট মধু এ জন্য বেশি প্রিয়ছিল যে, আল্লাহ তা’আলা বলেন, এর মধ্যে মানবজাতির রোগ নিরাময় রয়েছে। মধুর রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা। সকালে খালি পেটে জিহ্বা দ্বারা মধু চেটে খেলে কফ দূর হয়, পাকস্থলী পরিষ্কার হয়, দেহের অতিরিক্ত দূষিত পদার্থ বের হয়, গ্রন্থ খুলে দেয়, পাকস্থলী স্বাভাবিক হয়ে যায়, মস্তিষ্ক শক্তি লাভ করে, স্বাভাবিক তাপে শক্তি আসে, রতিশক্তি বৃদ্ধি হয়, মূত্রথলির পাথর দূর করে, প্রস্রাব স্বাভাবিক হয়, গ্যাস নির্গত হয় ও ক্ষুধা বাড়ায়। প্যারালাইসিসের জন্যও মধু উপকারী। মধু হাজারো রকম ফুল ও দানার নির্যাস। দুনিয়ার সকল গবেষকগণ একত্রিত হয়ে এমন নির্যাস প্রস্তুত করতে চাইলেও কখনও বানাতে পারবে কি-না এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এটা শুধু মহান আল্লাহপাকেরই শান যে, তিনি বান্দার জন্য এমন উত্তম ও বিশেষ উপকারী নির্যাস সৃষ্টি করে দিয়েছেন।
দুধ
যৌনশক্তি বৃদ্ধি এবং যৌবন ধরে রাখতে দুধের ভূমিকা অতুলনীয়। বিশেষ করে ছাগলের দুধ পুরুষের যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। আবু নাঈম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে পানীয় দ্রব্যের মধ্যে দুধ সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিল। এর রহস্য হলো এই যে, দুধ রতিশক্তি সৃষ্টি করে দেহের শুষ্কতা দূর করে এবং দ্রুত হজম হয়ে খাদ্যের স্থলাভিষিক্ত হয়ে যায়, বীর্য সৃষ্টি করে, চেহারা লাল বর্ণ করে, দেহের অপ্রয়োজনীয় দূষিত পদার্থ বের করে দেয় এবং মস্তিষ্ক শক্তিশালী করে।
বাদাম ও বিভিন্ন বীজ
কুমড়োর বীজ, সূর্যমূখীর বীজ, চিনা বাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম ইত্যাদিতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে এবং এগুলো শরীরে উপকারী কোলেস্টেরল তৈরি করে। সেক্স হরমোনগুলি ঠিকমতো কাজ করার জন্য এই কোলেস্টেরল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই প্রতিদিন অল্প করে হলেও বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে আপনার যৌনস্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
চিনি ছাড়া চা
প্রতিদিন দুধ-চিনি ছাড়া চা পান করলে শরীরে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। চা মস্তিষ্ককে সচল করে, রক্ত চলাচল বাড়ায় ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। প্রতিদিন অন্তত দিন থেকে ৫ কাপ পর্যন্ত চিনি ছাড়া সবুজ চা বা রঙ চা খেলে যৌনস্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং শরীরের ওজন কিছুটা হলেও কমে যায়।
রঙিন ফল
যৌনস্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে প্রতিদিন খাবার তালিকায় রঙিন ফলমূল রাখুন। আঙ্গুর, কলা, কমলা লেবু, তরমুজ, পিচ ইত্যাদি ফল যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত উপকারী। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের মেডিকেল টিমের গবেষণা অনুযায়ী একজন পুরুষের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় অন্তত ২০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি থাকলে তার স্পার্মের কোয়ালিটি উন্নত হয়। আবার টেক্সাসের A&M ইউনিভার্সিটির মতে তরমুজ শরীরে যৌন-উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে। তারা যৌন উদ্দীপক ওষুধ ভায়াগ্রার সাথে তরমুজের তুলনা করেছেন।
রসুন
ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহ.) ‘জামউল জাওয়ামে’ নামক গ্রন্থে দায়লামী থেকে একটি বর্ণনা উদৃত করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে লোক সকল! তোমরা রসুন খাও এবং তদ্দারা চিকিৎসা করাও। কারণ, এতে রোগ নিরাময় হয়। রসুনে অনেক উপকারিতা রয়েছে। রসুন ফোড়া ভালো করে, ঋতুস্রাব চালু করে, প্রস্রাব স্বাভাবিক করে, পাকস্থলী থেকে গ্যাস নির্গত করে, নিস্তেজ লোকদের মধ্যে যৌনক্ষমতা সৃষ্টি করে, বীর্য বৃদ্ধি করে, গরম স্বভাব লোকদের বীর্য গাঢ় করে, পাকস্থলী ও গ্রন্থির ব্যাথার উপকার সাধন অ্যাজমা এবং কাঁপুনি রোগেও উপকার সাধন করে। তবে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অধিক রসুন ব্যবহার ক্ষতিকর। এই রসুনকে আবে হায়াত বলেও আখ্যা দেওয়া হয়।
তৈলাক্ত মাছ
তৈলাক্ত মাছে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা সুস্থ যৌনজীবনের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সামুদ্রিক মাছেও প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড DHA O EPA শরীরে ডোপামিন বাড়িয়ে দেয় এবং মস্তিষ্কে উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে। তৈলাক্ত ও সামুদ্রিক মাছ খেলে শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং গ্রোথ হরমোনের নিঃসরণ হয়। ফলে যৌনস্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং যৌনক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
পালংশাক ও অন্যান্য সবজি
পালংশাকে আছে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম। ম্যাগনেসিয়াম শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। জাপানের গবেষকদের মতে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়লে যৌন উদ্দীপনাও বাড়ে। পালং শাক ও অন্যান্য বিভিন্ন রকম শাক, ব্রকলি, লেটুস, ফুলকপি, বাঁধাকপি এগুলিতে রয়েছে ফলেট, ভিটামিন বি-সহ অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো সুস্থ যৌনজীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান।
Comments
Post a Comment