যৌনমিলন সম্পর্কে ভুল ধারণা জন্মানো খুবই সহজ। যৌন-বিষয় নিয়ে সরাসরি কথা বলায় লজ্জাবোধ থাকার ফলশ্রুতিতে যৌনতা সম্পর্কে আমাদের সমাজে নানবিধ ভুল কথা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাই মিলনের পূর্বে এ বিষয়ে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা অবশ্যক।
নিম্নে জন্মনিরোধক, গর্ভধারণ, যৌনবাহিত রোগ এবং যৌনমিলন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় আলোচনা করা হলো -
যৌনমিলন
>> অনেকবার যৌনমিলন করা কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
না।তবে মনে রাখবেন যৌনমিলন কোন প্রতিযোগিতা নয় যে আপনি দেখবেন আপনি কত্ত বার মিলন করতে পারেন! যৌনমিলন হলো কারও সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়া - যার প্রতি আপনি যত্নশীল। যদি আপনার মনে এমনটি না আসে তাহলে হয়তো আপনাকে পুনরায় ভাবতে হবে জীবনের কাছে আপনার চাওয়া কী?
>> এমন কোনো সম্ভাবনা আছে কি, তার লিঙ্গ আমার যোনীতে ফিট হবে না?
যোনিনালী এমন একধরনের পেশীকলা দিয়ে গঠিত যা প্রয়োজন অনুযায়ী সংকোচন এবং প্রসারণ ঘটে। মনে দুশ্চিন্তা থাকলে এটি নিজ থেকে সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। তাই মিলনকালে মানসিক প্রশান্তি অনেক বেশি জরুরি। যোনিনালী যে-কোন আকারের লিঙ্গ সঞ্চালনে সক্ষম। শুধু ধৈর্য এবং প্রয়োজনে লুব্রিকেটর ব্যবহার করে মিলন অনেক আনন্দদায়ক করে তোলা সম্ভব।
>> যৌনমিলন-শেষে টয়লেটে গেলে আমার যোনীতে হুল ফোটে (খোঁচা অনুভুত হয়) কেন? এটা কি কোনো সমস্যা?
না, সম্ভবত সমস্যা নয়। অনেকসময় মিলনকালে স্বজোরে লিঙ্গ যোনিনালীতে আসা-যাওয়ার ফলে ভগাঙ্কুরের শুকনো অংশেও ঘর্ষণ সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে প্রস্রাব করার সময় সেই শুষ্ক অঞ্চল প্রস্রাবের রাসায়নিক পদার্থের সংষ্পর্শে আসলে হুল ফোটার অনুভূতি হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি মূত্রথলীর সংক্রামণ অথবা মূত্রনালীতে সংক্রামণের কারণে হতে পারে। তাই এ সমস্যাটি পরিলক্ষিত হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি।
>> যৌনমিলন কি যন্ত্রনাদায়ক?
তা অস্বস্তিকরও হতে পারে। এর মানে হলো আপনার যৌনাঙ্গে পরিমাণ মতো রস নিঃসৃত হয় নি অথবা আপনাকে অন্য যৌনাসন (স্টাইল) চেষ্টা করতে হবে। এটার মানে এও হতে পারে আপনার সঙ্গী খুব দ্রুত যাচ্ছেন এবং বেশি চাপ দিচ্ছেন অথবা আপনি ঘাবড়ে গেছেন (নার্ভাস)। এই যন্ত্রনা উপরের সবগুলো কারণের সমন্বয়েও হতে পারে। যদি আপনি ব্যথা অনুভব করেন তাহলে মিলন থামিয়ে দিন এবং আপনার সঙ্গীকে এ বিষয়ে অবহিত করুন। কিছু পরিমাণ লুব্রিকেট ব্যবহার অথবা আসন পরিবর্তন করে পুনরায় চেষ্টা করুন। যদি সবকিছুর পরও ব্যথা না যায় তাহলে যৌনমিলন করা ঠিক হবে না। ব্যথার বিষয়টি কখনও স্বামীর কাছ থেকে লুকাবেন না। সেও চাইবে না আপনাকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ উপভোগ করার। যৌনমিলনে সবসময় ব্যথা অনুভূত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তার পরীক্ষা করে আসল কারণ এবং প্রতিকার জানাবে আপনাকে।
গর্ভনিরোধ পদ্ধতিসমূহ
>> কনডম কি আমাকে যৌনবাহিত রোগ থেকে রক্ষা করবে?
কনডম আপনাকে যৌনবাহিত রোগ থেকে রক্ষা করবে, তবে সব রোগ থেকে নয়। কিছু যৌনবাহিত রোগ আছে যা চামড়ার সাথে চামড়ার সংশ্পর্শে সংক্রমিত হতে পারে।
>> আমি শুনেছি কনডম সবসময় গর্ভনিরোধে সক্ষম নয়। এটা কি সত্যি?
শুধুমাত্র শারীরিক মিলন থেকে সম্পুর্ণ বিরত থাকাই ১০০ ভাগ গর্ভধারণ থেকে রক্ষা করতে পারে, অন্য কিছু নয়। তবে কনডম সঠিকভাবে ব্যবহার করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক অল্প থাকে। মিলনকালে কনডম ফেটে যাওয়া কিংবা কনডমে সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকলেও নারী গর্ভবতী হয়ে যেতে পারে। তাই কনডম ব্যবহারে সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ করলে তা ফেটে যাবার অথবা শুক্রাণু লিক হবার সম্ভাবনা কম থাকে।
>> কনডম কি যোনিনালীতে হারিয়ে / থেকে যেতে পারে?
যদি মিলনকালে কনডম লিঙ্গ থেকে খুলে যায় তাহলে এটি যোনিনীনালীতে থেকে যেতে পারে। এটি হারিয়ে যাবে না - তবে বের করতে একটু ঝামেলা হতে পারে। এছাড়া বীর্যস্খলনের পর পুরুষ সঙ্গী লিঙ্গ বের করার সময় লিঙ্গের গোড়ায় কনডমকে আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে বের করতে হবে - না হয় বীর্য যোনীতে খসে যেতে পারে।
>> যদি মিলনকালে কনডম ফেটে যায় তাহলে যোনী ধুয়ে ফেললে কি গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে?
হ্যাঁ, সম্ভাবনা থাকে। মিলনের পর/সময় বীর্যস্খলন হলে শুক্রাণ খুব তাড়াতাড়ি সাঁতরে জরায়ুতে ঢুকে পড়ে। তাই যৌনাঙ্গ ধুয়ে নিলেও কোন লাভ হবে না। যদি বীর্য যোনীতে পড়ে যায় এবং আপনি সন্তান চান না - তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে জরুরি নিরোধক ওষুধ নেওয়া যেতে পারে।
>> যদি আমি জন্মনিরোধক বড়ি সেবন করি এবং স্বামী আমার যোনীতে বীর্যস্খলন করেন তাহলে কি আমি গর্ভবতী হয়ে যাব?
যদি জন্মনিরোধক বড়ি সঠিক ভাবে/সময়মতো নেওয়া হয় তাহলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে না। তবে সঙ্গীর যদি যৌনবাহিত কোনো রোগ থাকে তা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। মনে রাখবেন, আপনি যদি ওষুধ খাবার পর বমি করেন, এবং একই সাথে অন্য ওষুধ গ্রহণ করেন অথবা একদিন জন্মনিরোধক বড়ি মিস্ হয়ে যায় তাহলে ওই বড়ি দ্বারা কাজ হবার সম্ভাবনা অনেক কম। কোনো একদিন খাবারবড়ি মিস্ হয়ে গেলে তা এর পরদিন সকালে মনে পড়া মাত্রই খেয়ে ফেলতে হবে।
গর্ভধারণ
>> যদি মাসিক/রজঃচক্র চলাকালীন মিলন করি তাহলে কি গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে?
না। তবে ইসলাম ধর্মে
মাসিক/রজঃচক্র
চলাকালীন মিলন হারাম!! সাধারণত রজঃচক্রের শেষদিকে ডিম্বানু নিঃসরণ শুরু হয়। মিলনের পাঁচ থেকে ছয় দিন পর পর্যন্ত শুক্রাণু বেঁচে থাকে। সেই হিসেব গননা করে আপনি অনুমান করতে পারেন - গর্ভধারণের সম্ভাবনা আছে কি-না?
>> যদি জন্মনিরোধক ব্যতিরেকে যৌনমিলন করার পর মাসিক/রজঃচক্র হয় - তার মানে কি আমি গর্ভবতী নই?
এমন অনেক নারী আছেন যাদের সন্তান গর্ভধারণের পরও (গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায়) পুরো ১০ মাস মাসিক রজঃচক্র হয়ে থাকে। তাই কনডম কিংবা খাবার বড়ি ছাড়া শারীরিক মিলন করার পর ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত হওয়া যাবে না আপনি গর্ভবতী কি-না! আপনি দোকান থেকে প্রেগনেন্সি টেস্ট-কিট কিনে ঘরে এ পরীক্ষা করতে পারেন। তবে কোনো একজন ডাক্তারের মাধ্যমে রক্ত এবং প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়াই উত্তম।
>> মুখ দিয়ে শুক্রাণু গিলে খেলে কি কোনো নারী গর্ভবতী হতে পারেন?
না। শুক্রাণু একপ্রকার ছোট্ট শক্তিশালী সাঁতারু, কিন্তু শুক্রাণু বীর্য সমেত গিলে খেলে তা বেশিদূর হলে পেট পযন্ত যেতে পারবে। পেটে যাবার পর এটি পেটের ভিতরের রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে মৃত্যুবরণ করবে। আর কোনভাবে জীবন্ত থাকলেও তা সাঁতার কেটে নারী জরায়ু পর্যন্ত যাবার রাস্তা নেই। সুতরাং গর্ভবতী হবারও কোনো অাশঙ্কা নেই।
>> এটা কি সত্যি মিলন ছাড়া গর্ভধারণ সম্ভব নয়?
না। গর্ভধারণের জন্য শারীরিক মিলনের প্রয়োজন নেই। কোনো পুরুষের বীর্য যদি নারীর যোনিমুখের কাছাকাছি নিঃসৃত করা হয় তাহলে শুক্রাণু নিজ থেকে সাতার কেটে যৌনাঙ্গে ঢুকে যেতে সক্ষম যেখানে তা ডিম্বানুর সঙ্গে নিষেক করে নারীকে গর্ভবতী করতে সক্ষম!
>> আমি গর্ভবতী কি-না তা জানার জন্য কি আমাকে পরবর্তী মাসিক/রজঃচক্র পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে?
শারীরিক মিলনের ১০ দিন পর রক্ত কিংবা প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি জানতে পারেন আপনার ডিম্বানু নিষিক্ত হয়েছে কি-না। গর্ভধারণ জানার জন্য রজঃচক্র পর্যন্ত অপেক্ষা না করলেও চলে।
>> যৌন মিলনকালে বীর্যস্খলনের আগে যদি লিঙ্গ নারী যৌনাঙ্গ থেকে বাহির করে ফেলা হয় তাহলে কি নারী অন্তঃস্বত্ত্বা হবার সম্ভাবনা থাকে?
যদিও পুরুষ তার বীর্য নারী যোনীতে না ফেলে, তবুও অনেকক্ষেত্রে নারী অন্তঃস্বত্ত্বা হবার সম্ভাবনা থাকে। পুরুষের লিঙ্গের লালা ঝরান থেকে নারী জরায়ুতে কিছু পরিমাণ শুক্রাণু চলে যেতে পারে যা ডিম্বানুর নিষেক ঘটাতে সক্ষম। এমনকি বীর্য যৌনাঙ্গের কাছাকাছি পড়লেও শুক্রাণু নিজ থেকে সাঁতার কেটে জরায়ুতে প্রবেশ করতে পারে।
Comments
Post a Comment