ব্রিটিশ জার্নাল অব ইউরোলজিতে সম্প্রতি এক রিসার্চের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এটি রীতিমতো চমকপ্রদ এবং মানব-ইতিহাসসহ চিকিৎসাশাস্ত্রে নতুন এক তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে এই গবেষণার দ্বারা। ব্রিটিশ জার্নাল অব ইউরোলজিতে ‘এম আই নরমাল…’ শিরোনামে বিস্তর গবেষণাধর্মী এক রিসার্চের ফলাফল প্রকাশিত হয়।
এতে বলা হয়েছে, মানুষ মাত্রই বিশেষ করে, পুরুষেরা নিজেদের গোপনাঙ্গে আকার নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব, মানসিক এক ধরণের উত্তেজনা, অসুস্থতা কিংবা চিন্তায় আচ্ছন্ন বা ভুগে থাকেন। যাদের পুরুষাঙ্গের আকার লম্বা তারা মনে করে থাকেন, তাদের যৌনমিলনে সঙ্গিনী বা স্ত্রীকে পূর্ণ সুখভোগ দিয়ে থাকেন বা সক্ষম।
পক্ষান্তরে এমনও পুরুষ আছেন যারা অসুস্থতায় বা দুঃচিন্তায় ভোগেন, পুরুষাঙ্গের সাইজ ছোট হওয়ার কারণে তারা তাদের স্ত্রী, পার্টনারকে পূর্ণ সুখ যৌনমিলনের সময় হয়তো দিতে সক্ষম নন- এই দুই ধরনের মানসিক বৈকল্য বা এক ধরনের সাইকোলজিক্যাল প্রভাব তাদের দেহ-মনে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে থাকে।
বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা কিন্তু এই দুই অবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত এক চিত্র বা ফলাফল পেয়েছেন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক এবং কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির লিড গবেষক জেমস শেরলক বিশাল এক মানবগোষ্ঠীর ওপর গবেষণা চালিয়েছেন। গবেষণায় তারা পুরুষের পুরুষাঙ্গের আকার ছোট কিংবা লম্বা-বড় পুরুষাঙ্গ তার সঙ্গিনীর যৌনমিলনে কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে তা গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করেছেন। ১৫ হাজার পুরুষের পেনিসের সাইজ তারা যেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, একই সাথে ৫০ হাজার উভয় লিঙ্গের (স্ত্রী এবং পুরুষ) মানুষের ওপর গবেষণা, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন।
গবেষণাকালে ১৫ হাজার বিভিন্ন গ্রুপ, ধর্ম, গোত্র ও এথনিক মাইনোরিটির পুরুষের সাইজ তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের এই এথনিক গ্রুপের মধ্যে ছিলো অধিকাংশ ইউরোপীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের পুরুষ। আফ্রিকা ও এশিয়ার বৃহৎ গ্রুপ এর বাইরে রয়ে গেছেন। যার ফলে আরও অধিক বৃহৎ আকারে গবেষণা হয়তো শেষ পর্যন্ত আরও করা লাগতে পারে--- এমন কথাও তারা বলেছেন। এই ১৫ হাজার পুরুষের মধ্যে গবেষকদল পেনিসের এভারেজ সাইজ মুসলমানিসহ ও ছাড়া ১৩.১২ সেন্টিমিটার (৫.১৬ ইঞ্চি) থেকে ১১.৬৬ সেন্টিমিটার (৪.৫৯ ইঞ্চি) পেয়েছেন। এই গ্রুপের মধ্যে অধিকাংশের সার্জারির পরেও এই এভারেজের সাইজের নিচে পড়ে নি।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই রিসার্চাররা বলছেন, এই পুরুষাঙ্গ যখন স্ত্রীর লিঙ্গের যোনীর মধ্যে ঢুকে স্পার্ম ডেলিভারি করে থাকে, সকল পুরুষের এবং স্ত্রীর ক্ষেত্রে একই অবস্থান ও নিয়ম থাকা সত্ত্বেও কেন পুরুষেরা তখনও যোনীর ভিতরে ঢুকানোর পরেও তারা তাদের পেনিসের সাইজ ছোট কিংবা বড় আকারের সাইকোলজিক্যাল ডিসওর্ডারে ভোগেন!?
তারা বলছেন, মানুষের স্বভাবজাত গুণ হলো, তারা মনে করে পেনিসের সাইজ বড় বা লম্বা হলেই বোধ হয় যৌনসুখী হওয়া যায় বা স্ত্রী কিংবা পার্টনার বেশি সুখ লাভ করে থাকে। আর এ চিন্তা-চেতনা থেকেই যাদের সাইজ ছোট তারা এক ধরণের হীনম্মন্যতায় ভোগেন। আসলে কী তাই?
তারা বলছেন, বিশাল গরিলার পেনিসের সাইজ মাত্র ১.৫ ইঞ্চি। অথচ তার সুখানুভূতির বা স্ত্রী গরিলার অর্গাজমে কোনো সমস্যা হয় না! মানুষের মাথায় সবচেয়ে দ্রুত এবং সহজেই খেলে চলে পেনিসের সাইজ লম্বা হলেই নারীর অর্গাজম সহজেই হবে! কিন্তু কেন??? গবেষকরা আসলে কী বলছেন? তারা বলছেন, কম্পিউটারে ফিমেল রেইট থ্রি-ডি কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজসহ গবেষণার ফলে তারা দেখতে পেয়েছেন, পেনিসের সাইজ আকারে কিংবা লম্বায় ছোট কিংবা বড় যৌনমিলনের সুখের ক্ষেত্রে কোনো বাধাই নয়।
অধিকাংশ নারী জানিয়েছেন, পেনিসের সাইজ নিয়ে তারা মোটেই চিন্তিত নন। তারা তাদের সঙ্গীর বর্তমান সাইজ নিয়ে খুশি। প্রশ্ন উঠতেই পারে, বড় আকারের পেনিস ভালো বা উত্তম কি-না! আদতে রিসার্চে সেরকম কোনো ফল আসে নি। রিসার্চ বলছে, ‘সাইজ ডাজেন্ট ম্যাটার...’। এমনকি শতকরা ৯১ শতাংশ মহিলাই পুরুষের লিঙ্গের আকার নিয়ে চিন্তিত নন। তারা চিন্তা করেন, তার সঙ্গী বা স্বামীটা যৌনতার সময় তাকে কতটা ভালোবাসছে, কতটা আদর করছে, তার প্রতি কতটা মনোযোগী। তবে হ্যাঁ, যৌনসুখ অবশ্যই কিছুটা নির্ভর করে কতটা সময় স্ত্রীর সঙ্গীটি তাকে ‘সময়’ দিতে পারলেন যৌনকর্মের সময়। মানে খেলার মাঠে অনেকটা সময় থাকতে পারলেই স্ত্রী যেন খুশি!!
গবেষকরা পেয়েছেন, যৌনমিলনের সময় নারীর অংশগ্রহণ এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সহযোগিতাই আসল। নারী কীভাবে বিছানায় খেলেন, তার ওপরই তার অর্গাজম নির্ভর করে। দেখা গেছে, ছোট সাইজের পেনিস দিয়ে যৌনমিলনের মাধ্যমেও নারীর পূর্ণ অর্গাজম হয়েছে। তবে লম্বা পেনিসেরর জন্য প্রয়োজন ডিপার ভেজিনা বা গভীরতা, যাতে পুরোপুরি ঢুকানো যায়।
৫০ হাজার উভয় লিঙ্গের (স্ত্রী এবং পুরুষ) মানুষের মধ্যে ৮৫% বলেছেন তারা তাদের সঙ্গীর পেনিসের সাইজ ও রিলেশন এবং ইন্টারকোর্স নিয়ে খুবই তৃপ্ত। এর মধ্যে ৫৫% পুরুষ তাদের পেনিসের সাইজ ছোট নিয়ে সুস্পষ্ট মতামত দিয়েছেন।
স্টাডিতে তারা দেখেছেন, নারীর অর্গাজমের ব্যাপারে পেনিসের সাইজ খুব একটা সম্পর্কিত নয়। তবে একই স্টাডির অন্য অংশে বলা হয়েছে, ভ্যাজিনার ভেতরের টিস্যুর অংশ যা পেনিসের সাথে ঘর্ষিত হয়, তার সাথে অর্গাজমের রিলেশন আছে। যদি তাই হয় তবে লম্বা পেনিসের ভূমিকা রয়েছে বলে তারা মনে করছেন, তারপরেও তারা ফাইনাল কনক্লুশানে উপনীত হন নি। বলেছেন, যদি তাই হয় এবং সাজেস্ট করেছেন, এশিয়া ও আফ্রিকান পুরুষের পেনিস ও নারীদের ভ্যাজিনার মধ্যকার সম্পর্কিত স্টাডি আরও বড় আকারে করার।
তবে সব চাইতে বড় যে তথ্য তারা দিয়েছেন তা হলো, পেনিসের সাইজ কিংবা ভ্যাজিনার গভীরতা যা-ই হোক, আসল বিষয় হলো কনফিডেন্স ডেভেলপ বা বিল্ড করার মধ্যে সাইকোলিজিক্যাল বড় রকমের এক রহস্য নিহিত--- নারী পুরুষের পূর্ণ যৌনতৃপ্তির জন্য।
তাদের গবেষণার শেষ অংশে তারা উল্লেখ করেছেন, মাত্র ৩% লোকের মধ্যে পেনিসের সাইজ তারা নর্মাল বা এভারেজ সাইজ থেকে কম সাইজের পেয়েছেন, অর্থাৎ সর্বশেষ তথ্যমতে, ৯.৫ সেন্টিমিটার (৩.৭৪ ইঞ্চি) থেকে ১০ সেন্টিমিটার (৩.৯৩ ইঞ্চি) লম্বা সাইজ তারা পেয়েছেন। এই সাইজকেই তারা ধরেছেন পুরুষের স্বাভাবিক পেনিসের আকারের থেকে ছোট সাইজের পেনিস যা অস্বাভাবিক ধরণের, তবে এই সাইজের পেনিসের দ্বারাও পরিপূর্ণ স্ত্রী-সম্ভোগ সম্ভব এবং নারীর অর্গাজমের স্বাভাবিক প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
তারা এই পর্যায়ে এসে বলেছেন, এই ছোট সাইজ হওয়ার কারণে এটা কেবল তাদের মনস্তাত্ত্বিক এক চিন্তায় ভোগা ছাড়া আর কিছু নয়! এতে নারীর অর্গাজমের কোন ব্যাঘাত ঘটে নি। এর পরেও যদি নিজেকে অপরাধী ফিল করেন তাহলে তারা যেন যেন বৃহৎ আকারের গরিলার দিকে তাকান, যার অসম্ভব এক ছোট সাইজের পেনিস অাছে!! রয়েছে।
Comments
Post a Comment