4.মুসলিমদের সেক্সুয়াল লাইফ

 

 আপনি কি জানেন? মুসলিমদের সেক্সুয়াল লাইফকে যে মেডিকেলে খুবই এপ্রিশিয়েট করা হয়! গাইনি মেডিকেল বইতে মুসলিম সেক্সুয়াল বিহেভিয়ারের প্রশংসা করে লেখা থাকে, ‘মুসলিম ছেলেদের সারকামসেশন (মুসলমানি) করা থাকে তাই তাদের স্ত্রীর অমুক অসুখ কম হয়। অথবা সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে মুসলিমরা অমুক নিয়মটি ফলো করে তাই তাদের অমুক অসুখটি কম হয়।’

তাই ‘মুসলিমদের কি সেক্সের আলাদা কোনো নিয়ম আছে!?’ --- এমন প্রশ্ন ঝট করে মনে জাগে। তাই আসুন দেখে নিই চিকিৎসাবিদ্যা এ বিষয়ে কী বলে!

এ বিষয়ে একজন সার্জারির প্রফেসরের উক্তি থেকে বর্ণনা দেওয়া যাক। সদা হাস্যময়ী স্যার বলেছিলেন, ‘Breast feeding (নবজাতকের মায়ের দুধ পান করা) & Sexual intercourse (সেক্স করা) reflexly মানুষ শিখে যায়, এটা কাউকে শিখাতে হয় না।’

এখানেই কথা আছে কিন্তু! রিফলেক্সলি ঠিক জিনিসটি শেখার আগেই প্রযুক্তির অকল্যাণে বিধ্বংসী কিছু পারভার্সন ঢুকে গেছে আমাদের স্বাভাবিক যৌনজীবনে ।

কীভাবে?    অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলির মূল ভিজিটর আসে অশালীন রগরগে তথাকথিত ‘সংবাদ’ থেকে।

তারা দেশে এরকম সংবাদ না পেলে বিদেশ থেকে সংবাদ আমদানি করে। লক্ষ্য করে থাকবেন, রমজান মাসেও ভিজিটরের লোভে সানি লিওনের সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত হয় নি অনেকে। মোবাইলে-মোবাইলে অশালীন ভিডিও সহজে কিনতেও পাওয়া যায় যারা নেট ইউজ করে না তাদের সুবিধার জন্য।

পর্নো পড়ার সময় বা দেখার সময় আমাদের কয়জনের মনে থাকে, এগুলি কিন্তু গুনাহ্। চোখের ব্যভিচার!

এই সহজলভ্য পর্নো আর চটিসাইটগুলি মানুষের স্বাভাবিক যৌনজীবনকে অস্বাভাবিকতা দিয়ে রিপ্লেস করে দিয়েছে। সংসারজীবনে নেমে এসেছে অশান্তি।

‘ভালবেসে স্ত্রীর দিকে তাকালেও সোওয়াব’--- এসব হাদিস উঠে গিয়ে এসেছে, ‘LOVE করে আর লাভ নেই রে পাগলা।’

মানুষ সেক্সুয়াল লাইফ নিয়ে পুরোই বেদিশা। তারা শুধু ছুটছে। ‘কই আমিতো পর্নো ছবির পুরুষ বা মহিলাটির মত আনন্দে আত্মহারা হলাম না। হয়তো আমার ওয়াইফ বা হাসব্যান্ড ঠিক পারছে না। কোথায়? কোথায় আছে সেই সোনার হরিণ। কোথায় সেই আনন্দের ফোয়ারা? সবাই পায়, আমি পাই না কেন?’

বিবাহ-বহির্ভূত সেক্স, হোমোসেক্সুয়ালিটি, এনাল-সেক্স মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। দুনিয়াতে এতো মজা নিলে আখেরাত কিন্তু অন্ধকার! তাই আজ আমরা জানবো ইসলামে সেক্সুয়াল বিহেভিয়ারের ক্ষেত্রে কোন্ ৪ ধরনের সেক্স নিষিদ্ধ।

1. Extramerital Sex

2. Sexual intercourse during menstruation and Puerperium

3. Homosexuality

4. Anal Sex

 

Extramerital Sex:-

বিবাহ-বহির্ভূত সেক্সের কারণে সিফিলিস, গনোরিয়া, ক্ল্যামাইডিয়া, মোনিলিয়াসিস, ট্রাইকোমোনিয়াসিস, ব্যাকটেরিয়াল ভেজাইনোসিস, জেনিটাল হার্পিস, জেনিটাল ওয়ার্টস প্রভৃতি সমস্যা আর তাদের কমপ্লিকেশন তো আছেই। সারভাইক্যাল ক্যান্সার (জরায়ু মুখের ক্যান্সার) যার মূল কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস তাও ট্রান্সমিট হয়। আর ঘাতক ব্যাধি এইডস তো আছেই।

আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটেও যেও না, কারণ এটি অশ্লীল ও মন্দ পথ।’ (সূরা বনী ইসরাইল, ৩২)

# যে মুহাররামাত মহিলার সাথে যিনা করবে তার হুকুম --- যে ব্যক্তি কোন মুহররামাত (যাদেরকে বিবাহ করা হারাম) যেমন - আপন বোন, কন্যা ও বাবার স্ত্রী ইত্যাদির সাথে হারাম জানা সত্ত্বেও যিনা করবে তাকে হত্যা করা ফরজ ।

বারা ইবনে আজেব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার চাচাকে ঝাণ্ডা উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেখে বললাম : কোথায় চলেছেন? তিনি বললেন - আমাকে রাসুল করিম (সা.) প্রেরণ করেছেন ওই মানুষের নিকট যে তার বাবার স্ত্রীকে বিবাহ করেছে। তিনি (সা.) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তার গর্দান উড়িয়ে দেওয়ার জন্য এবং সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার জন্য। (সহীহ হাদিস, তিরমিজি হাদিস নম্বব ১৩৬২, নাসাঈ হাদিস নং ৩৩৩২)।

তাহলে ইনচেস্ট (Incest)-ভর্তি পর্নো-চটি সাইটগুলি আমাদের নিজেদের ঐতিহ্য বাহী মূল্যবোধসম্পন্ন সম্পর্কগুলিকে কোথায় নিয়ে চলেছে?

 

Homosexuality (সমকামিতা):-

লূত (আ.)-এর সময়ের আগে পৃথিবীতে হোমোসেক্সুয়ালিটি ছিল না। সমকামিতা চরিত্র আর স্বভাব বিধ্বংসী এক জঘন্যতম অপরাধ ইসলামের দৃষ্টিতে। লূত (আ.)-এর জাতি এ অপকর্ম করার জন্য আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে মাটিতে ধ্বসিয়ে দিয়েছেন। তাদের উপর পাথর বৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন। এ ছাড়া শেষ বিচারের দিনেও তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘এবং আমি লূতকে পাঠিয়েছি। যখন সে নিজ জাতিকে বলল- তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে গোটা বিশ্বের কেউ করে নি? তোমরাতো কামবশতঃ পুরুষের নিকট গমন কর মহিলাদের ছেড়ে। এবং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছো। [সূরা আরাফ ৮০-৮৪]

আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন - ‘অবশেষে যখন আমার আদেশ পৌঁছল, আমি উক্ত জনপদকে উপুড় করে নিচ করে দিলাম এবং তার ওপর স্তরে স্তরে কাঁকর পাথর বর্ষণ করলাম। যার প্রতিটি তোমার রবের কাছে চিহ্নিত ছিল। এবং পাপিষ্ঠদের কাছ থেকে বেশি দূরেও নয়।’ (সুরা হূদ ৮২-৮৩)

আর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা লূতের জাতির কর্ম অবস্থায় যাকে পাবে তার কর্তা এবং কর্ম উভয়কে হত্যা করবে। (সহীহ হাদিস আবু দাউদ হাদিস নং ৪৪৬২, তিরমিযী হাদিস নং ১৪৫৬)

হোমোসেক্সুয়ালিটি জন্মগতভাবে আসে, হোমোদের এমন আজব কথা তাদের নিজেদের আবিষ্কার!

 

Anal Sex

Anus (মলদ্বার) অনেক রকম মাইক্রোওর্গানিজম দিয়ে পূর্ণ। আনহাইজিনিক সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সের কারণে ফিমেল পার্টনার ভয়াবহ রকমের পি.আই.ডি.-তে আক্রান্ত হয়ে যায়। এনাল ফিসার, পাইল্স হবার ঝুঁকি বাড়ে। এনাল স্ফিংটারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়।

হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে এনাল সেক্স (নিতম্বে সহবাস) করবে আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না ।’ (নাসাঈ আল ইশ্রাহ ২/ ৭৭- ৭৮/১ ; তিরমিযী ১/২১৮)

হাদিসে আরও আছে, ‘যে ব্যক্তি স্ত্রীর সাথে নিতম্বে সহবাস করবে সে লা’নত প্রাপ্ত’ (আবু দাউদ ২১৬২ , আহমদ ২/ ৪৪৪, ৪৭৯)

 

Sexual intercourse during menstruation and puerperium:-

 - (পিরিয়ড চলাকালীন  আর সন্তান জন্মদানের পরবর্তী 90 দিনের মধ্যে সহবাস)

পিরিয়ড চলাকালীন নরমাল ডিফেন্স মেকানিজম নষ্ট হয়ে যায়। মহিলাদের প্রজনন অঙ্গের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। একই ঘটনা ঘটে সন্তান জন্মদানের পরবর্তী 90 দিন। আর এ সময়ের সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স প্রজনন অঙ্গগুলিতে ভয়াবহ ইনফেকশন ঘটায় লোকাল অর্গানিজম।

স্ত্রীর হায়েজ (পিরিয়ড) চলাকালীন তার সাথে সহবাস করা স্বামীর জন্য হারাম। (ফথুল কাদীর, ১/২০০)

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তারা তোমার নিকটহায়েজ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করে। তাহলে বলে দাও এটা অশুচি বা কষ্ট। কাজেই তোমরাহায়েজ চলাকালীন সহবাস থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাস করবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায় । যখন তারা ভালোভাবে পবিত্র হয়ে যাবে, তখন তাদের নিকটে যাও যেভাবে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারিকে ভালবাসেন এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরও ভালবাসেন। (সুরা আল বাকারাহ, ২২২)

এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তিহায়েজাহ নারীর সাথে বা তার নিতম্বে সহবাস (এনাল সেক্স) করে, জ্যোতিষীর নিকট যায় আর জ্যোতিষীর কথা বিশ্বাস করে তাহলে সে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি কুফরি করল।’

তাহলে এই হল চারটি বিধি নিষেধ।

উপসংহার হিসেবে কয়েকটি কথা বলি। জাতি হিসেবে আমরা হীনম্মন্যতায় ভোগা জাতি। নিজের দেশ ভাল লাগে না। গরিব। নিজের ভাষা ভাল লাগে না। টিভি, এফএম রেডিওতে বাংরেজি ভাষায় কি যে কথা বলি আমাদের নিজেদেরই বুঝতে কষ্ট হয়। নিজের সংস্কৃতি ভাল লাগে না। আমাদের নিজেদের ধর্মও ভাল লাগে না। দু’কলম পড়াশুনা করে অনেকেই নিজের ধর্মকে মৌলবাদী আখ্যা দিয়ে নামাজ, রোজাকে শিকেয় তুলে রেখেছেন। আমাদের ধর্ম বাস করে ঈদের বিপণী বিতানে, পোশাক কেনার মধ্যেই আমাদের ঈদ। কোরবানির সময় বড় ধার্মিকতার পরিচয় দিয়ে লাখ টাকার গরু, উট কুরবানি দিই নাকি জবাই দেই। শ্বশুরবাড়ি থেকে কী পশু পাঠালো কুরবানি দেওয়ার জন্য তার হিসেব করি।

এই অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে নিজের পরিচয় নিয়ে গর্ব করার মানসিকতা তৈরি হোক আমাদের। জন্মসূত্রে পাওয়া মুসলিম পরিচয়কে শানিত করে প্র্যাক্টিসিং মুসলিম হয়ে ওঠার তৌফিক আল্লাহ যেন আমাদের দেয়। ইসলামের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে প্র্যাক্টিসিং মুসলিম হোক আমাদের পরিচয়।